ইয়াছিন আরাফাত
স্টাফ রিপোর্টার
পিতাকে শান্তনা দিয়ে মাহতাবের শেষ কথা,-
“বাবা আমার জন্য টেনশন করোনা,
আমি সুস্থ্য হয়ে যাব ইনশাল্লাহ”
না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেবিদ্বারের মাহতাব রহমান ভূঁইয়া(১৫)। গত চারদিন ধরে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার মামা রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও মহিবুল ইসলাম শামীম।
মাতাবের বাবা মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মৃত্যুর আগে আমার সোনা মানিক আমাকে শান্তনা দিয়ে বলেছিল – বাবা আমার জন্য টেনশন করোনা, আমি সুস্থ্য হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
গত ২১ জুলাই ঘটনার দিন স্কুল ছুটির ঠিক ১০/১৫ মিনিট আগে হঠাৎ স্কুলের ভবনে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণরত যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক হতাহত হন। তার বাবা প্রতিদিন তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। এ সময় মাহতাবের বাবাসহ অন্যান্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের খুঁজে পেতে ছুটাছুটি করতে থাকেন।
এ ঘটনায় সপ্তম শ্রেণীর মাহতাব রহমান ভূঁইয়া(১৫)কে গুরুতর আহত অবস্থায় সেনাবাহিনী উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চতুর্থ তলার আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। মাহতাব ওই স্কুলের ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো। মাইলস্টোন স্কুলে তার শিক্ষার্থী কোড নম্বর ছিল ১০১৪। দূর্ঘটনায় তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
মাহতাব রহমান ভূঁইয়া কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার চুলাশ গ্রামের ভুঁইয়া বাড়ির মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া ও লিপি আক্তার দম্পত্তির একমাত্র ছেলে। মাহতাব ৩ ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল। তার বড় বোন নাবিলা একই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী এবং ছোট বোন নাইসার বয়স ৩ বছর। তারা ঢাকার উত্তরায় একটি বাসায় থাকতেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা থেকে মাহতাবের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ-উখারী বাজার ঈদগাঁহ মাঠে রাত পৌনে ১০টায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে বড় বাবা (দাদার বাবা) মৃতঃ বারেক ভূঁইয়ার কবরের পাশে দাফন করা হয়। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন। জানাযার নামাজ পড়ান, স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা লোকমান হোসেন।