ইয়াছিন আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের দারোরা গ্রামে পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথটি ড্রেজারের মাটি ফেলে ভরাট করায় গ্রামজুড়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এক হাজারেরও বেশি পরিবারের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে পুরো গ্রামের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের মধ্যে রয়েছেন মৃত করম আলীর ছেলে সাবেক কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের, মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল সালাম ও শহিদুল ইসলামের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ। তারা ড্রেজারের মাটি ফেলে পানির স্বাভাবিক চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগী অনেকে অভিযোগ করেন এর মধ্যে নুর ইসলাম বলেন, গত তিন বছর ধরে আমরা চরম দুর্ভোগে আছি। একটুখানি বৃষ্টি হলেই ঘর থেকে বের হতে বাঁশের মাচা ব্যবহার করতে হয়। স্কুল-কলেজ ও হাট-বাজারে যেতে আমাদের অবর্ণনীয় কষ্ট হয়।
সিরাজুল ইসলাম (পিতা-আঃ রব) বলেন, বর্ষা এলে ঘরে হাঁটু পানি জমে। রান্না করা থেকে শুরু করে শিশুদের পড়াশোনা সবকিছুতেই ভোগান্তি পোহাতে হয়।
আঃ জলিল পিতা মৃত মোকসদ আলী জানান, তিন বছর ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে, জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে, অথচ সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।
লিটন মিয়া বলেন,আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন পানি ডিঙিয়ে স্কুলে যায়। অনেক সময় যেতে পারে না। এভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
ফজলুর রহমান (পিতা মৃত সেকান্দর আলী) বলেন, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে চাইলে বিপাকে পড়তে হয়। পানি আর কাদার কারণে গ্রামের ভেতর থেকে বের হওয়াই মুশকিল।
আঃ মতিন (পিতা সেকান্দর আলী) জানান,শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পানিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতার কারণে মানসিক কষ্টে আছি সবাই।
নুরুল ইসলাম (পিতা মৃত দুলু মিয়া) বলেন,বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু সমাধান হয়নি। আমরা চাই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হোক।
মোছলেম বলেন,চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একসময় উর্বর জমি এখন পানিতে তলিয়ে আছে।
গল্লাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দর্জি ফজলুল করিম বলেন,পানি চলাচলের প্রাকৃতিক পথ কেউ ভরাট করে থাকলে তা অবৈধ। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন,আমরা দারোরা গ্রামের জলাবদ্ধতার বিষয়টি অবগত হয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে পানি নিষ্কাশনের পথ পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, পানি নিষ্কাশনের পথ ভরাট করা হলে শুধু জলাবদ্ধতাই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এতে মশাবাহিত রোগ, ডায়রিয়া ও ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
গ্রামবাসী বলছেন, সরকারি উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের পথ দ্রুত খুলে দিলে আগামী বর্ষায় তারা আর পানিবন্দি হয়ে থাকতে হবে না।