ইয়াছিন আরাফাত
স্টাফ রিপোর্টার
সংবাদ সম্মেলনে এক বক্তব্যে সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন,
গনতন্ত্রের ‘চোখ’কে কাঠের চশমা পড়িয়ে রাখা হচ্ছে।
অতীততের ন্যায় গণমাধ্যম অশুভ শক্তির রোষানল থেকে আজও ‘মুক্ত গণমাধ্যম’ হতে পারেনি।
গণতন্ত্র এবং গণমানুষের কথা বলার জায়গাটি সুরক্ষায় গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিকরা বরাবরই অবহেলিত, তারা যদিও একটি সংখ্যালঘু পরিবার!
এ সংখ্যালঘু পরিবারটি না থাকলে কিংবা সংবাদ পরিবেশনে বিরত থাকলে যে কোন শক্তিধর রাস্ট্র ১২ ঘন্টার মধ্যে অন্ধ হয়ে ধ্বংস অনিবার্য।
তাই রাষ্টের সরকারকে আহ্বান করব সাংবাদিকদের মুক্ত সাংবাদিকতায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথ চলায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্মানিত সাংবাদিক ভাই-বোনদের বলছি,-
সাংবাদিকরা নানা মত ও পথের অনুসারি হতে পারেন, সক্রিয় হোক আর নিস্ক্রীয় হোক রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধে কেউ নন, মতের কারনে বিভক্তি থাকা স্বাভাবিক কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব তথা সাংবাদিক সমাজের অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন নিঃসন্দেহে শুভ সংবাদ। যার সাথে জড়িত আছে জাতির বিবেক, গণতন্ত্রের চোখ, সুবিধা বঞ্চিত ও অসহায় গণমানুষের ভরসা,আকাঙ্খা।
বাংলাদেশে এখন আর কারোরই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, সড়ক দূর্ঘটনা, স্বার্থদ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক, হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে সংঘটিত হত্যাকান্ডে নিহত সাধারণ মানুষের লাশের মিছিলে সংখ্যালঘু খ্যাত সাংবাদিক পরিবারের সদস্য হত্যার ঘটনাও বেড়ে চলেছে।
বিশ্বের যেসব দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়না সে সব দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর মূল কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং রাজনৈতিক আধীপত্য রক্ষা। দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডার, মাস্তান, ভাড়াটে কিলার, ঠিকাদার, কালোবাজারী, অসাধু ব্যবসায়ী, দূর্নীতিবাজদের রক্ষা, সুবিধাভোগী পুলিশ বাহিনীর দূর্বল তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রীতা অন্যতম কারন।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার বাহিরে থাকলে সাংবাদিকদের জন্য মায়াকান্নায় উথলে উঠেন, আর ক্ষমতায় গেলে জনস্বার্থে সত্য কথা বলার অপরাধে সাংবাদিকরা হয়ে যান প্রতিপক্ষ, ক্ষমতাসীনদের চরম শত্রু। আমাদের দেশের আইনশৃংখলা ও বিচার ব্যবস্থা বরাবরই প্রভাবশালী, ধনিক গোষ্ঠী, অসাধু ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক, মাসেলবাহিনী, সন্ত্রাসী, কালোবাজারীদের পক্ষে। কারন তাদের শক্তি রাষ্ট্র যন্ত্রের চেয়েও অধিক, তাদের অর্থ আছে, তাদের উপরে হাত আছে, তাদের সন্ত্রাসী ও কিলার বাহিনী আছে। সাধারণ মানুষের ওসব নেই, তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া স্বাভাবিক।
অথচ যে সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের কাছে নিগৃহীত অবহেলিত সেইসব সংবাদকর্মীদের কর্তৃক একটি সংবাদ তথ্যবহুল, নিরপেক্ষ, সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ করে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে কতকষ্ট, কতশ্রম, কতমেধা-সময়-অর্থব্যয় করতে হয়, তা সাধারণ ভাবে একজন পাঠকের অনুভূতিতে আসার কথা নয়। সংবাদটি যত ছোট আর বড়ই হোক না কেন তা তৈরী করতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, তথ্য-উপাত্ব সংগ্রহ, সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলা, সংবাদটি তৈরী করে যথা সময়ে ফ্যাক্স, ই-মেইল অথবা তারবার্তায় পত্রিকা অফিস পৌঁছানো, অফিস কর্মকর্তাদের সম্পাদনা, প্যাষ্টিং, মুদ্রণ থেকে শুরু করে অসংখ্য ধাপ পেড়িয়ে পরিবহনে পত্রিকা এজেন্ট ও হকারের মাধ্যমে ভোর বেলায় পাঠকের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়া, পাঠক ঘুম থেকে উঠে বেড ‘টি’র সাথে চোখ বুলিয়ে খুব সহজে যে খবরটি জেনে নিলেন, অথচ ওই কাজটি কত কঠিন আমাদের দেশের অধিকাংশ পাঠকের কাছেই অজানা।
সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ, জাতির বিবেক, গণতন্ত্রের চোখ। জাতির দূর্দিনে যারা দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেন। জীবন বাজি রেখে সমাজের অনিয়ম, দূর্নীতি, সন্ত্রাসসহ মানব কল্যাণ বিরোধী কর্মকান্ড, উচ্ছাস অগ্রগতি ,সমস্যা সম্ভাবনা তুলে ধরেন, জাতির দূর্দিনে রাষ্ট্রকে সঠিক দিক নির্দেশনার পথ দেখান অথচ তারাই রাষ্ট্র এবং সরকারের কাছে নিগৃহীত অবহেলিত, দূর্নীতিবাজ ও গণ-শত্রুদের চক্ষুশূল।
সমাজ প্রশাসন রাষ্ট্রের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে বঞ্চিত অসহায় নির্যাতিত জণগোষ্ঠীর শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দ্বারস্থ হন। আর সাংবাদিকরা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন সুবিধা বঞ্চিত ওইসব মানুষের সুখ দুঃখ, হাঁসি কান্না, সাফল্য আর ব্যর্থতার কথা। কিন্তু সেই সাংবাদিকরা যখন হামলা-মামলা-নির্যাতন এবং খুনের শিকার হন তখন সাধারণ মানুষ যাবেন কোথায় ? সাংবাদিকরা সংখ্যালঘু সত্য, কিন্তু তাদের নির্যাতন, ভয় দেখিয়ে, হুমকী দিয়ে, হত্যা করে গনতন্ত্রের চোখ উপড়ে ফেলা যাবে না, জাতির বিবেক ধ্বংস কিংবা মেধা শূণ্য করা যাবেনা। তারা জাতির ভালো-মন্দ, শাসক এবং বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন, যারা সব সময়ই ঝুঁকি নিয়ে দেশ জাতি ও বিশ্ববাসীর কল্যানে কাজ করে থাকেন অথচ বাস্তবতা এটাই যে সব সময় শাসক গোষ্ঠীর কালো থাবা সাংবাদিকদের নিত্য সঙ্গী।
পরিশেষে বলব, আমাদের প্রয়োজনে আমাদের মান অভিমান ভুলে গিয়ে আমরা সাংবাদিক আমাদের একটিই পরিবার ‘সাংবাদিক পরিবার’ এ শব্দটাকে বুকে ধারন করে, রুটি-রুজির অধিকার আদায়ের পাশা পাশি সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যান্ডের বিচার, সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় হয়রানীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই।
ছবিটি,- খাগড়াছড়ির ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরা। তিনি পেশাগত দায়িত্বপালনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।